হাঁসের মাংস: কতটা খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?

হাঁসের মাংস: কতটা খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?

শীতকাল আসা মানেই বাঙালির রান্নাঘরে হাঁসের মাংসের কদর বেড়ে যাওয়া। এর কারণ শুধু স্বাদে নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে শরীর উষ্ণ রাখার প্রচলিত ধারণাও। কিন্তু এই সুস্বাদু খাবারটি কার জন্য কতটা উপকারী এবং কাদের এড়িয়ে চলা উচিত, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ এবং এটি গ্রহণের সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

হাঁসের মাংসের পুষ্টি ভান্ডার

হাঁসের মাংস একটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এর পাশাপাশি এতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিনের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের মাংসে প্রায় ৩০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যা শীতকালে শরীরকে উষ্ণ ও কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে।

এতে থাকা উল্লেখযোগ্য পুষ্টি উপাদানগুলো হলো:

  • প্রোটিন: শরীরের গঠন ও কোষ মেরামতের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য।
  • ফ্যাট ও কোলেস্টেরল: হাঁসের মাংসে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি, যা শরীরকে শক্তি জোগায়।
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: এতে রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন এবং ভিটামিন বি৬ এর মতো জরুরি ভিটামিন থাকে।
  • খনিজ পদার্থ: আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। বিশেষ করে আয়রনের উপস্থিতি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

শীতকালে হাঁসের মাংসের উপকারিতা

শীতের মৌসুমে শরীর উষ্ণ রাখার জন্য বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। হাঁসের মাংস উচ্চ ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় এই সময়ে এটি খেলে শরীর ভেতর থেকে গরম থাকে। এছাড়াও, যাদের খাবারে অরুচি বা রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য পরিমিত পরিমাণে হাঁসের মাংস খাওয়া উপকারী হতে পারে। এটি শরীরে শক্তি জোগানোর একটি চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে।

কারা খাবেন না?

স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও কিছু ব্যক্তির জন্য হাঁসের মাংস ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে নিচের সমস্যাগুলো থাকলে হাঁসের মাংস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন:

  • অ্যালার্জি: যাদের হাঁসের মাংসে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের এটি পুরোপুরি বর্জন করা উচিত।
  • হৃদরোগ: উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় হৃদরোগীদের জন্য হাঁসের মাংস ক্ষতিকর হতে পারে।
  • উচ্চ কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি লিভার: যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বা লিভারে চর্বি জমেছে (ফ্যাটি লিভার), তাদের হাঁসের মাংস না খাওয়াই ভালো।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেও হাঁসের মাংস খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • প্রোটিনে বিধিনিষেধ: যাদের অসুস্থতার কারণে প্রোটিন গ্রহণে বিধিনিষেধ রয়েছে, তাদেরও হাঁসের মাংস পরিহার করা বা খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।

কতটা খাবেন এবং কীভাবে রান্না করবেন?

যেকোনো মাংসই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম (মাঝারি আকারের দুই টুকরো) মাংস খাওয়াই যথেষ্ট।

রান্নার পদ্ধতির ওপরও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নির্ভর করে। হাঁসের চামড়ায় ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই রান্না করার আগে চামড়া ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমানো যায়। আর যদি চামড়াসহ রান্না করা হয়, তবে খাওয়ার সময় সেটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। মাংসটি যেন ভালোভাবে সেদ্ধ হয়, সেদিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, হাঁসের মাংস একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও এটি ঘনঘন বা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে পরিমিত পরিমাণে এই সুস্বাদু খাবারটি উপভোগ করাই শ্রেয়।

Facebook Comments

Similar Posts

  • পান্তা ভাত খাওয়া কি ভাল?

    পেট ফাঁপা এবং শরীরে অস্বস্তি নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা সত্যিই খুব খারাপ লাগার মতো। এই কারণেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিনের শুরুটা হালকা ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের উপর জোর দেন। একটি সুস্থ সকালের মূল চাবিকাঠি হলো আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা। আর এক্ষেত্রে পান্তা ভাত হতে পারে আপনার সেরা বন্ধু। সকালের নাস্তায় পান্তা ভাত খেলে…